ইলন মাস্কঃ বাস্তবের আয়রনম্যান (পার্ট ২)
আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
পেপাল থেকে বের হওয়ার পর ইলন আবার ফিরে গেলেন ছোটবেলায় যখন তার আগ্রহ ছিল স্পেস বা মহাকাশ নিয়ে।শুরু করলেন স্পেস নিয়ে যত বই আছে সেগুলো পড়া।ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চলে আসলেন লস এঞ্জেলেসে।এখানে এসে মার্স সোসাইটিতে যোগ দেন এবং স্পেস ব্যাবসা নিয়ে খোজ খবর রাখতে থাকেন।এসময় তিনি রাশিয়ায় কয়েকবার ভ্রমণ করেন রকেট কেনার জন্য।কিন্তু রাশিয়ানরা তার বাজেটের চেয়ে দ্বিগুণ দাম চায় তার কাছে।তার উপর তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করলো।রাগে জেদে তিনি রাশিয়া থেকে চলে আসেন।ঠিক করলেন নিজেই বানানো শুরু করবেন রকেট।
তার স্পেস ব্যাবসার চিন্তাভাবনা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা ছিল।তিনি চান রকেটে করে সাধারণ মানুষরাও যেন মহাকাশে যেতে পারেন।রকেট শুধু বড় বড় কোম্পানি বা সরকারই যেন শুধু না কেনে।সাধারণ মানুষ এর কেনার আয়ত্বে যেন আনতে পারেন সে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন।বন্ধুবান্ধবরা সন্দেহ করলো তিনি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন কিনা।কিন্তু তিনি সেসব গ্রাহ্য করলেন না।
তিনি দেখলেন রকেটকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাবহার এর উপযোগী করার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রকেটের দাম।এত খরচের কারণ হচ্ছে রকেট একবার ব্যাবহার করলে আর দ্বিতীয়বার ব্যাবহার করা যায় না।তিনি চাইলেন রকেটকে পুনরায় ব্যাবহার উপযোগী করে তোলার জন্য।অর্থাৎ রকেট উড্ডয়ন এর পরে সেটা যেন পুনরায় মাটিতে ফিরে আসতে পারে সেটা নিয়েই কাজ শুরু করেন।আর এটা করতে পারলে মংগলে জনবসতি গড়ে তোলা সম্ভব এই লক্ষ্য নিয়েই ২০০২ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু হয় স্পেসএক্স এর।
তিনি দেখলেন রকেটকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাবহার এর উপযোগী করার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রকেটের দাম।এত খরচের কারণ হচ্ছে রকেট একবার ব্যাবহার করলে আর দ্বিতীয়বার ব্যাবহার করা যায় না।তিনি চাইলেন রকেটকে পুনরায় ব্যাবহার উপযোগী করে তোলার জন্য।অর্থাৎ রকেট উড্ডয়ন এর পরে সেটা যেন পুনরায় মাটিতে ফিরে আসতে পারে সেটা নিয়েই কাজ শুরু করেন।আর এটা করতে পারলে মংগলে জনবসতি গড়ে তোলা সম্ভব এই লক্ষ্য নিয়েই ২০০২ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু হয় স্পেসএক্স এর।
![]() |
লস এঞ্জেলেসে স্পেসএক্স এর হেডকোয়ার্টার |
যাত্রা শুরুর পরই ঘোষণা দেন ১৮ মাস পরেই স্পেসএক্স থেকে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ হবে ফ্যালকন-১।কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত ৪ বছরেরও বেশি সময় পর ২০০৬ সালে উৎক্ষেপিত হয়।কিন্তু উৎক্ষেপণ এর সাথে সাথেই তা বিধ্বস্ত হয়।এরপর আরো দুইবার চেষ্টা করলেও তা বিধ্বস্ত হয়।শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে চতুর্থবারের চেষ্টায় তা সফল হয়।
![]() |
ফ্যালকন-১ |
২০০৩ সালে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন এবারহার্ড এবং তার ব্যাবসায়িক পার্টনার মার্ক টারপেনিং শুরু করেন টেসলা মোটর কোম্পানির।এই কোম্পানি তৈরির লক্ষ্য ছিল গ্যাস এর বদলে বিদ্যুত চালিত গাড়ি তৈরি করা। ২০০৪ সালে ৭.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এর সবচেয়ে বড় অংশীদার হন ইলন মাস্ক এবং চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।এবারহার্ড ছিলেন সিইও।
২০০৬ সালে সান্টা ক্লারায় একটি ইভেন্টে টেসলা মোটরের রোডস্টার গাড়ির প্রদর্শনী হয়।হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার এবং ডিজনির সাবেক সিইও মাইকেল এইজনার এই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন।গাড়ির দাম প্রকাশ করা হয় ৯০০০০ ডলার এবং একবার চার্জ করলে গাড়িটি ২৫০মাইল যেতে সক্ষম ছিল।ইলন মাস্ক সবাইকে আশ্বস্ত করেন ৩ বছরের মধ্যে ৫০০০০ ডলারের গাড়ি চলে আসবে। রোডস্টার গাড়িটি কিনতে ৩০ জন আগ্রহ প্রকাশ করেন যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুগলের ফাউন্ডার লেরি পেইজ এবং সার্গেই ব্রিন।
২০০৬ সালে সান্টা ক্লারায় একটি ইভেন্টে টেসলা মোটরের রোডস্টার গাড়ির প্রদর্শনী হয়।হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার এবং ডিজনির সাবেক সিইও মাইকেল এইজনার এই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন।গাড়ির দাম প্রকাশ করা হয় ৯০০০০ ডলার এবং একবার চার্জ করলে গাড়িটি ২৫০মাইল যেতে সক্ষম ছিল।ইলন মাস্ক সবাইকে আশ্বস্ত করেন ৩ বছরের মধ্যে ৫০০০০ ডলারের গাড়ি চলে আসবে। রোডস্টার গাড়িটি কিনতে ৩০ জন আগ্রহ প্রকাশ করেন যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুগলের ফাউন্ডার লেরি পেইজ এবং সার্গেই ব্রিন।
![]() |
টেসলার দুই প্রতিষ্ঠাতা মার্ক টারপেনিং এবং মাইকেল এবারহার্ড |
এদিকে এবারহার্ড ও মাস্কের মধ্যে তখন মতের অমিল হওয়ায় সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছিল।২০০৭ সালের আগস্টে এবারহার্ডকে সিইও থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সাময়িকভাবে মাইকেল মার্কস ও জিভ ডোরি সিইওর দায়িত্ব পালন করেন।এবারহার্ডকে টেকনোলজি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়।টেসলার পেছনে এবারহার্ডের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।একইসাথে একে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে মাস্কের অবদানও কম ছিলনা।তাই কোম্পানির চাকুরীজীবিদের মধ্যে দুইপক্ষের বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছিল।শেষ পর্যন্ত টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এবারহার্ড ও টারপেনিং ২০০৮ সালে টেসলা ছেড়ে চলে যান এবং তখন থেকে ইলন মাস্ক টেসলার সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বছর ছিল টেসলা এবং ইলনের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কঠিন বছর।টেসলা ছিল দেওলিয়া হওয়ার পথে,স্পেসএক্সেও পরপর তিনটি রকেট উৎক্ষেপণ ব্যার্থ হওয়ায় কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পথে এবং এর প্রভাব পড়ে তার ব্যাক্তি জীবনেও।স্ত্রী জাস্টিন মাস্কের সাথে ৮ বছরের বিবাহিত সম্পর্কের ইতি হয়।এ অবস্থায় চতুর্থবার এর চেষ্টায় ফ্যালকন ১ সফল হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পান ইলন।কিন্তু এটা টেসলার দেওলিয়া হওয়াকে আটকাতে পারছিলনা।প্রায় ১০০ গাড়ির প্রিঅর্ডার নিয়েও গাড়িগুলো বাজারে আনতে পারছিলেন না অর্থের অভাবে।তার ভাই কিম্বেল এ সময়ের কথা মনে করে বলেন ইলন সেসময় জেলে যেতে পারতেন।
শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ক্রিসমাসে ইলনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে নাসা।এসময় ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্ট্যাশনে ১২ টি ফ্লাইট পাঠানোর বিনিময় হিসেবে ১.৬ বিলিয়ন ডলার পান যা দিয়ে টেসলার দেওলিয়া হওয়া ঠেকান।টেসলার মডেল এস গাড়িটি ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বেস্ট সেলিং ইলেক্ট্রিক প্লাগ ইন গাড়ির স্বীকৃতি পায়।২০১৭ সাল পর্যন্ত এই মডেলের ২ লাখ এরও বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে।২০১৫ সালে মডেল এক্স এবং ২০১৭ সালে আসে মডেল ৩ গাড়ি।এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি গাড়ি টেসলা থেকে বিক্রি হয়েছে।বর্তমানে আমেরিকা এবং আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন দেশে টেসলার রিচার্জ স্টেশন আছে যা দিয়ে খুব দ্রুত গাড়ি চার্জ করা যায়।টেসলার গাড়ি কিনলে এসব চার্জার দিয়ে বিনামূল্যেই চার্জ করা যায়।
২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বছর ছিল টেসলা এবং ইলনের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কঠিন বছর।টেসলা ছিল দেওলিয়া হওয়ার পথে,স্পেসএক্সেও পরপর তিনটি রকেট উৎক্ষেপণ ব্যার্থ হওয়ায় কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পথে এবং এর প্রভাব পড়ে তার ব্যাক্তি জীবনেও।স্ত্রী জাস্টিন মাস্কের সাথে ৮ বছরের বিবাহিত সম্পর্কের ইতি হয়।এ অবস্থায় চতুর্থবার এর চেষ্টায় ফ্যালকন ১ সফল হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পান ইলন।কিন্তু এটা টেসলার দেওলিয়া হওয়াকে আটকাতে পারছিলনা।প্রায় ১০০ গাড়ির প্রিঅর্ডার নিয়েও গাড়িগুলো বাজারে আনতে পারছিলেন না অর্থের অভাবে।তার ভাই কিম্বেল এ সময়ের কথা মনে করে বলেন ইলন সেসময় জেলে যেতে পারতেন।
শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ক্রিসমাসে ইলনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে নাসা।এসময় ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্ট্যাশনে ১২ টি ফ্লাইট পাঠানোর বিনিময় হিসেবে ১.৬ বিলিয়ন ডলার পান যা দিয়ে টেসলার দেওলিয়া হওয়া ঠেকান।টেসলার মডেল এস গাড়িটি ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বেস্ট সেলিং ইলেক্ট্রিক প্লাগ ইন গাড়ির স্বীকৃতি পায়।২০১৭ সাল পর্যন্ত এই মডেলের ২ লাখ এরও বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে।২০১৫ সালে মডেল এক্স এবং ২০১৭ সালে আসে মডেল ৩ গাড়ি।এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি গাড়ি টেসলা থেকে বিক্রি হয়েছে।বর্তমানে আমেরিকা এবং আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন দেশে টেসলার রিচার্জ স্টেশন আছে যা দিয়ে খুব দ্রুত গাড়ি চার্জ করা যায়।টেসলার গাড়ি কিনলে এসব চার্জার দিয়ে বিনামূল্যেই চার্জ করা যায়।
![]() |
মডেল এস গাড়ি |
![]() |
টেসলা গাড়ির চার্জার |
জাস্টিন মাস্কের সাথে ডিভোর্সের পর তিনি অভিনেত্রী টালুলাহ রাইলির সাথে প্রেম করা শুরু করেন।২০১০ সালে তারা বিয়ে করেন।কিন্তু ২০১২ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়।২০১৩ তে তারা পুনরায় বিয়ে করেন কিন্তু পরের বছর আবারো তাদের ডিভোর্স হয়।
![]() |
টালুলাহ রাইলি ও ইলন মাস্ক |
![]() |
সোলার সিটির লোগো |
২০০৬ সালে ইলন এর কাজিন লিন্ডন, পিটার এবং রাস --- রাইভস ব্রাদারস -- সৌর বিদ্যুৎ কোম্পানি সোলারসিটির যাত্রা শুরু করেন।ইলন তার কাজিনদের সাহায্য করেন এবং কোম্পানির সবচেয়ে বড় অংশীদার হন।তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।ছয় বছর পর এটা দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।
পরের পর্বে থাকবে ইলন মাস্কের কিছু ট্রিভিয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
পার্ট ৩ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
পার্ট ৩ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
No comments