ইলন মাস্কঃ বাস্তবের আয়রন ম্যান (পার্ট ১)

ইলন মাস্ক (১৯৭১-) 





আপনি আমেরিকা বা ইংল্যান্ডে যেতে চান পড়ালেখা বা চাকরির উদ্দেশ্যে।গিয়ে সেখানের স্থায়ী বাসিন্দা হতে চান।আমেরিকা বা ইংল্যান্ড দুটিই পৃথিবীর দেশ।কিন্তু যদি এমন হয় যে আপনি স্থায়ী হতে চাইছেন পৃথিবীর কোথাও না!মঙ্গল গ্রহে!আপনার আমার কাছে আশ্চর্য্যজনক শোনালেও অন্তত একজনের কাছে এটা সেরকম কিছু না।সেই একজন হচ্ছেন ইলন মাস্ক যিনি স্বপ্ন দেখেন মানুষ পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহে যাওয়া আসা করছে নিয়মিত।


এই ভিনগ্রহের সাথে যোগাযোগ কেবল ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই নয় সেখানে আলাদা জনবসতি করা ব্যাবসা বাণিজ্য করা ঠিক পৃথিবীতে মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে।তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৪ সালের মধ্যে মানুষ মঙ্গলে পা রাখবে।সেটা যদি সফল হয় ইলন মাস্ক নামের এই পাগলাটে লোকটার কাছে পৃথিবীবাসী অনেক ঋণী হয়ে থাকবে।এটাই হয়ত অন্য সৌরজগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রথম ধাপ হয়ে থাকবে।এতে হয়ত আমরা পেয়ে যেতে পারি এলিয়েনদের দেখা অথবা আমাদের মতোই রক্ত মাংসের মানুষ! কে এই ইলন মাস্ক?


 না তিনি কোন পিএইচডি ডিগ্রীধারী সাইনটিস্ট নন বরং তিনি একজন ব্যাবসায়ী উদ্যোক্তা।রকেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা এই দুইটি বড় কোম্পানির সিইও তিনি।এছাড়া সৌরবিদ্যুৎ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সোলার সিটির চেয়ারম্যানও তিনি।অসাধারন পরিশ্রমী এই মানুষটি কারো কাছে জিনিয়াস আবার কারো কাছে বদ্ধ উন্মাদ অবাস্তব সব লক্ষ্য ছোঁয়ার ঘোষণা দেওয়ার জন্য।


স্পেস এক্স,টেসলা  এবং  সোলার  সিটির  সিংহভাগ শেয়ার ইলন মাস্কের 




ইলন মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালে সাউথ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়।তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। ভাই কিম্বাল মাস্ক  এবং বোন টোসকা মাস্ক।বাবা সাউথ আফ্রিকান এরল মাস্ক ছিলেন মেকানিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল  ইঞ্জিনিয়ার এবং মা কানাডিয়ান মায়েই মাস্ক ছিলেন মডেল এবং ডায়েটেশিয়ান।ভাইবোনদের মতো তিনি অতো সামাজিক ছিলেন না।স্কুলে তিনি অদ্ভুত নামের কারণে বুলির শিকার হতেন।তিনি ছোটবেলা থেকেই বইয়ের পোকা ছিলেন।তার হাতে সবসময়ই বই দেখা যেত।স্কুলে থাকতেই তিনি আইজেক এসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজ, লর্ড অফ দ্য রিংস, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়ে ফেলেন।এগুলো ছাড়াও তার আরেকটি প্রিয় বই দ্য হিচিকারস গাইড টু গ্যালাক্সি। তিনি সবাইকে এই ১৫ টি বই পড়ার উপদেশ দিয়েছেন।তার প্রতিভার প্রথম জানান দেন মাত্র ১২ বছর বয়সে 'ব্লাস্টার' নামের একটি ভিডিও গেম তৈরি করে।


বাম দিক থেকে ইলন,কিম্বাল এবং টোসকা মাস্ক 



ভাইবোনদের সাথে ইলন মাস্ক 




পরিবারের সাথে তার বেশিদিন থাকা হয়নি।বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে ইলন চলে যান বাবার সাথে।কিছুদিন পর ভাই কিম্বালও  চলে আসেন তার সাথে।ইলন প্রায়ই তার বাবাকে বলতেন আমেরিকায় যাওয়ার কথা।কিন্তু তার বাবা সেটা চাইতেন না।বরং তিনি বাসার পরিচারিকাকে বিদায় করে দেন আমেরিকার জীবনযাপন কেমন ছেলেকে বুঝানোর জন্য। এদিকে সাউথ আফ্রিকায় তখন বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন করা লাগতো যেটা এড়ানোর জন্য ১৭ বছর বয়সে ইলন কানাডায় পাড়ি জমান।মা কানাডিয়ান হওয়ায় কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে যান সহজেই।কানাডাকে তিনি আমেরিকা যাওয়ার মাধ্যম হিসাবে নিয়েছিলেন।কানাডায় শুরুর দিকে কিছুদিন সংগ্রামের মধ্যে থাকতে হয়।এরপর ১৯৮৯ সালে কুইনস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।এখানে তার পরিচয় হয় প্রথম স্ত্রী জাস্টিন উইলসনের সাথে।শুরু হয়  প্রেম।পরে  ১৯৯২ সালে উইনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়াতে স্কলারশিপ পেয়ে চলে আসেন পড়তে এবং ইকোনমিক্স আর ফিজিক্সের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন।স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাইড ফিজিক্সে পিএইচডিও করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু ২ দিন ক্লাস করেই চলে আসেন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য।


ইলন মাস্কের প্রেমিকা এবং প্রথম স্ত্রী জাস্টিন উইলসন 



উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা হয় ছোট ভাই কিম্বাল মাস্কের সাথে জিপ২ এর মাধ্যমে।জিপ২ ছিল একটা অনলাইন ব্যাবসায়িক টেলিফোন ডিরেক্টরির মতো যেখানে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় হতো।কিন্তু ১৯৯৫ সালে সবার ধারণা ছিল ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়া একটা বোকার ধ্যানধারণা ছাড়া কিছুই না।যাই হোক শেষপর্যন্ত ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কম্পিউটার জিপ২ কিনে নেয় ৩০৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে।ইলন পান ২২ মিলিয়ন ডলার।এরপর তিনি শুরু করেন অনলাইন লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান এক্স ডট কম।পরে এর প্রতিদ্বন্দ্বী কনফিনিটি এবং পেপাল এর সাথে যুক্ত হয়।পেপালে তখন ছিলেন সব জিনিয়াস মানুষজন যাদেরকে একত্রে বলা হতো পেপাল মাফিয়া।ইলন ছিলেন এর সবচেয়ে সফল এবং বিখ্যাত সদস্য।

Zip2 এর লোগো 


পেপাল মাফিয়ার সদস্যরা 



এক্স ডট কমে কাজ করার সময় ২০০০ সালে ইলন তার প্রেমিকা জাস্টিনকে বিয়ে করেন।তিনি তখন এক্স ডট কমের সিইও।জানুয়ারি মাসে বিয়ে করলেও প্রচুর ব্যাস্ততার কারণে হানিমুনে গেলেন সেপ্টেম্বরে ব্যাবসায়িক সফরের পাশাপাশি সিডনিতে অলিম্পিক গেমস দেখা এবং হানিমুন করা দুটোই সেরে আসতে।কিন্তু তার হানিমুনকে নরক বানিয়ে ফেললো অন্য কর্মকর্তারা।তারা ইলনকে সরিয়ে সিইও বানায় পিটার থিয়েলকে যিনি কনফিনিটির সিইও ছিলেন।২০০১ এ থিয়েল এক্স ডট কমকে পেপালে রিব্রান্ড করেন। ইলন আর সিইও হতে পারেননি।কিন্তু কোম্পানির স্বার্থে থিয়েলকে সমর্থন করেছিলেন। ২০০২ সালের জুলাইয়ে eBay পেপালকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার অফার করে কিনে নেয়।ইলন পান ১৮০ মিলিয়ন ডলার।পেপাল থেকে তিনি তখন বেরিয়ে আসেন।তখন থেকেই শুরু স্পেস এক্স এবং টেসলার।সে গল্প থাকছে পরের পর্বে।



পিটার থিয়েল ও ইলন মাস্ক 



পার্ট ২ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।



No comments

Powered by Blogger.