অজ্ঞাতনামা The Unnamed (২০১৬)-- গোবরে পদ্মফুল
![]() |
অজ্ঞাতনামা সিনেমার পোস্টার |
তৌকির আহমেদ পরিচালিত অজ্ঞাতনামা ছবিকে এই বছরের এখন পর্যন্ত সেরা বাংলা ছবি বললে খুব একটা ভুল বলা হবেনা।এটা তার পরিচালিত চতুর্থ সিনেমা।এর আগে জয়যাত্রা,রূপকথার গল্প,দারুচিনি দ্বীপ বানিয়েছিলেন।প্রতিটি সিনেমাই ছিল দারুণ কিছু।অজ্ঞাতনামাও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।ভীনদেশি সিনেমা দেখতে দেখতে যখনই আমরা নিজের দেশের সিনেমা দেখতে যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের হতাশ হতে হয়।বস্তাপচা কাহিনী,তামিল তেলেগুর নকল,গান নকল,কস্টিউম,মাথা কাটা পোস্টার এমনকি সংলাপ পর্যন্ত দেখা যায় অন্য মুভি থেকে মেরে দেওয়া হচ্ছে।এতসব বস্তাপচা জিনিসের মধ্যেই মাঝে মাঝে গোবরে পদ্মফুল হয়ে আসে অজ্ঞাতনামা,জালালের গল্প,মনপুরার মতো ছবি।
অজ্ঞাতনামার পোস্টার দেখে অনেকের কাছে মনে হতে পারে এটা কোন ক্লিশে আর্ট ফিল্ম।কিন্তু না এটা মর্মস্পর্শী কাহিনী নিয়ে হলেও এতে যথেষ্ট বিনোদনের উপকরণ রয়েছে।এতে আছেন শক্তিমান অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু,শহীদুজ্জামান সেলিম,মোশাররফ করিম,শতাব্দী ওয়াদুদ এবং নিপুণ।এছাড়া বিশেষ চরিত্রে আছেন আবুল হায়াত।
সিনেমার গল্প বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি বিদেশে পাঠানো হয় রেমিটেন্সের জন্য তাদের সমস্যা নিয়ে।বিদেশ গিয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল করার জন্য বেশির ভাগ মানুষই বাপ দাদার জায়গা জমি বিক্রি করে যায়।অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে।এর পরিণতি যে অনেক সময় ভয়াবহ হতে পারে সেটাই বুঝা যাবে এই সিনেমাতে।
ফজলুর রহমান বাবুর ছেলে মধ্যপ্রাচ্যে যায় জীবিকার উদ্দেশ্যে।কিন্তু মাসখানেক ধরে তার কোন খোঁজ নেই।থানার ওসি শতাব্দী ওয়াদুদের কাছে খবর আসে আবুল হায়াতের ছেলে আব্দুল হাকিম ৩ দিন আগে মারা গেছে।কিন্তু আবুল হায়াত ফোনে যোগাযোগ করে দেখে ছেলে বেঁচে আছে।পরে জানা যায় দালাল শহীদুজ্জামান সেলিম পাসপোর্টের ছবিতে গলাকেটে ফজলুর রহমানের ছেলের ছবি বসিয়ে দিয়ে তাকে বিদেশ পাঠিয়েছে।অর্থাৎ মারা গেছে ফজলুর রহমান বাবুর ছেলে।এখন তার লাশ আনতে হবে ঢাকা থেকে।এই লাশ আনতে গিয়েই হবে অনেক ঘটনা যা অনেক বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরবে।
গল্পটা দুঃখজনক হলেও মোশাররফ করিম আর শহীদুজ্জামানের খুনসুটি নির্মল বিনোদন দিবে।বিশেষ করে শহীদুজ্জামান সেলিম পুরো ছবিতেই দর্শকদের হাসিয়ে গেছেন।দালাল এর মতো ধুরন্দর চরিত্রের সাথে খুব মানিয়ে গেছেন।
অজ্ঞাতনামা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে আপনার কোন আত্মীয় বিদেশে জীবিকার জন্য গিয়ে মারা গেলে যদি তার আসল পরিচয়েই মরতে না দেখেন বা লাশই ঠিকমতো না পান কবর দেওয়ার জন্য তাহলে আপনি কি করবেন?আপনার সমস্যার জন্য সাহায্য চেয়ে কি সরকারের কোন সহযোগিতা পাবেন?প্রশ্ন থেকে যাবে।
এই ধরনের সিনেমাগুলো দুঃখজনকভাবে শুধু সোশাল মিডিয়াতেই চলে।হলে চলেনা।সিনেপ্লেক্সে ঈদের আগে তাও কয়দিন চলেছিল এখন আবার বন্ধ হয়ে গেছে।আর নির্মাতারাও মনে হয় বক্সঅফিসের চেয়ে এওয়ার্ডকেই বেশি গুরুত্ত্ব দিয়েছেন যে কারণে এত প্রচারণা হয়নি।যাই হোক হলে যেহেতু চলছেনা টিভি বা ইউটিউবে পেলে দেখে ফেলার অনুরোধ রইলো সবার কাছে।
বিঃদ্রঃ লেখাটি ২০১৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।
No comments