দ্য আলকেমিস্টঃ নিজেকে জানতে শেখায় যে বই







এখন পর্যন্ত হাতে গোনা অল্প যে কয়টা বই পড়েছি তার মধ্যে অন্যতম সেরা বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’।ভবিষ্যতে যদি আরো অনেক বইও পড়ি এটা প্রিয় ৫টা বইয়ের মধ্যে সবসময়ই থাকবে।ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর লেখা এই বই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে।হ্যা ব্রাজিলে শুধু ফুটবলাররাই বিখ্যাত না;তাদের কাছে পাওলো কোয়েলহোর মতো লেখকও আছে।বইটি পর্তুগিজ ভাষায় লেখা ছিল।শুরুতে ব্রাজিলে এই বই মাত্র ৯০০ কপি বিক্রি হয়।প্রকাশকরাও আর পুনর্মূদ্রণের কথা চিন্তা করেননি।কিন্তু পরবর্তীতে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় এর অনুবাদ হলে ১৯৯০ এর পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলারের মর্যাদা পায়।২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এটি প্রায় ৭০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের এত জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ কি?কারণ এটা একটা ফিকশনধর্মী বই হলেও এর মাঝে আত্মোন্নয়ন এর অনেক শিক্ষা পাওয়া যায়।যারা খুব বেশি বই পড়েননি বা বই পড়ার অভ্যাস কম তাদের জন্যও এটা দারুণ উপযোগী বই।এগুলোই মূলত এই বইয়ের বিশেষত্ব।  



পাওলো কোয়েলহো 




কি আছে এই বইতে?তা জানার আগে ‘আলকেমিস্ট’ কাদের বলা হয় এটা জানা প্রয়োজন।মধ্যযুগে কেমিস্ট্রির একটা বিভাগ ছিল যেটা সাধারণ কোন ধাতুকে সোনায় রূপান্তরিত করার উপায় নিয়ে কাজ করতো এবং একই সাথে এমন ওষুধ খুঁজত যেটা যেকোন রোগ দূর করতে পারবে।এটাকে বলা হতো ‘আলকেমি’।আর আলকেমি নিয়ে যারা গবেষণা করতেন তাদের বলা হতো আলকেমিস্ট।বইটা পড়ে আমি যা বুঝেছি এখানে আলকেমিস্ট বলতে যারা নিজেকে উন্নত মানুষে পরিণত করার চেষ্টা করে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে।


আলকেমিস্ট বইয়ে সান্তিয়াগো নামের এক আন্দালুসিয়ান বালকের গল্প বলা হয়েছে যে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতো।রাখাল হলে ঘুরা যায় তাই সে মেষপাল এর রাখাল হয়।এরকম মেষ নিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই তার দিন কাটত।একসময় সে ঘুমের মধ্যে একই স্বপ্ন দুইদিন দেখতে পায়।সে রাতের ঘুমে স্বপ্নে পিরামিড দেখতে পায় এবং স্বপ্নে জানতে পারে সেখানে অনেক সম্পদ লুকানো আছে।সে যদি পিরামিড এর কাছে যেতে পারে তবে এই সম্পদ তার হবে।


তারপর সান্তিয়াগো ঠিক করে সে তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করবে।তারপর স্পেন থেকে আফ্রিকা হয়ে সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিতে গিয়ে তার সাথে অনেক মানুষের পরিচয় হয়।এদের মধ্যে একজন রাজা,দোকানদার,ইংরেজ সফরসঙ্গী,একজন আলকেমিস্ট উল্লেখযোগ্য।এই বড় ভ্রমণে সে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে জীবনের অনেক শিক্ষা পায়।বইটি পড়ার সময় সব পাঠকই সান্তিয়াগো নামের সেই বালকের মাঝে নিজের ছায়া খুঁজে পাবেন।



জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।কিন্তু এসব অভিজ্ঞতাই আমাদের অনেক কিছু শিখায় যা আমরা হয়ত নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যাই।সান্তিয়াগো নামের রাখাল ছেলেটা যেন সেই এড়িয়ে যাওয়া শিক্ষাগুলোই আমাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।   

দ্য আলকেমিস্ট বই থেকে পাওয়া কিছু জিনিস টুকে রাখলাম।







#প্রত্যেক মানুষেরই কিছু স্বপ্ন থাকে।কিন্তু কেউ বাস্তবে রূপান্তরিত করতে ভয় পায় কেউবা হাল ছেড়ে দেয়।যারা লেগে থাকে তারাই পারে।একথা হয়ত অনেক শুনেছেন।কিন্তু বইয়ের কাহিনীগুলো দেখলে আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে অনেক মিল পাবেন।


# আপনাকে সবাই সাহায্য করবে এই আশা করবেন না।অনেকের কাছেই ধোকা খাবেন।তবে দ্বিতীয়বার যাতে একই ধোকা না খান সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

# আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে কিছু সময়ের জন্য আপনি করতে চান না এমন কাজ করা লাগতে পারে।কিন্তু সেটাকে আঁকড়ে ধরে রাখবেন না।সময় হলে বিদায় জানাবেন সেই কাজকে।


# আপনি নিজের রাস্তায় কাজ করতে থাকেন ফল পাবেন।কিন্তু অন্যের রাস্তায় বাঁধা দিতে গেলে কিছুই পাবেন না।

# কাজ করা শুরু করলেই ভুল করতে করতে শিখবেন। বসে থাকলে কিছুই শিখবেন না।

# কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে সাহস হারাবেন না।ভয় পেলেই ভয় আরো বেশি চেপে ধরে।কঠিন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার চেয়ে মোকাবেলা করার দক্ষতা অর্জন করুন।

# অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে মাথা ঘামালে আসলে কোন লাভই হয়না।যেটা আপনার সাথে হয়ে গেছে সেটা আপনি মরে গেলেও একই থাকবে কোন পরিবর্তন হবেনা।আর ভবিষ্যতও আপনি যেরকম ভাবছেন সেরকম নাও হতে পারে।হয়ত একটা কিছু করলে সেটা আপনার জন্য ভালো হবে ভাবলেন কিন্তু দেখলেন খারাপ হয়ে গেল।আবার কোন একটা কিছু নিয়ে খুব টেনশন করলেন কিন্তু পরে দেখলেন আপনার টেনশনটা ছিল অমূলক।তাই বর্তমানকে নিয়েই বাঁচার চেষ্টা করুন।





লাস্টে বইয়ের একটা সুন্দর লাইন দিয়ে শেষ করি লেখাটা-  


Everyone seems to have a clear idea about how other people should lead their lives,but none about his or her own.

No comments

Powered by Blogger.