স্টিভ জবসের জীবনের ১০ টি অন্ধকার দিক
![]() |
স্টিভ জবস (১৯৫৫-২০১১) |
স্টিভ জবস আমাদের সবার কাছে
টেকনোলজি জগতের একজন জিনিয়াস হিসেবে পরিচিত।এপল এবং জবস দুটি নামই একটি আরেকটির
সাথে জড়িত।এপল এবং পিক্সারে তার কিছু অবিশ্বাস্য সাফল্য থাকলেও আর দশজন মানুষের
মতো তারও কিছু বাজে দিক আছে।আজ তার জীবনের এমন কিছু অন্ধকার দিক নিয়ে আলোচনা করবো
যা হয়ত আপনি জানেন না।
১।দত্তক
পল জবস এবং ক্লারা জবস তার আসল বাবা-মা নন।তার আসল বাবা সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া
আবদুলফাত্তাহ জন জান্দালি এবং মা আমেরিকান জোয়ান শিবেলি।জবসের জন্মের আগে তারা
উইসকনসিনে থাকতেন।তারা বিয়ে করার আগেই জবস শিবেলির গর্ভে চলে আসেন।কিন্তু শিবেলির
বাবা তার সাথে সিরিয়ান গ্রাজুয়েটের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিলেন না। এছাড়া ’৫০ এর দশকে একজন
অবিবাহিত নারীর অন্তসত্তা হওয়া সামাজিকভাবে অপ্রীতিকর ছিল।তাই শিবেলি সান
ফ্রান্সিস্কোতে চলে আসেন।সেখানে এক ডাক্তার অবিবাহিত মাদের দত্তক দেয়ার ব্যাবস্থা
করে দিতেন।
![]() |
পল জবস এবং ক্লারা জবস |
তখন পল এবং ক্লারা জবস দম্পতি সন্তান দত্তক নেয়ার চিন্তা করছিলেন।তারা শিবেলির বাচ্চাকে
নিয়ে নেন এবং নাম রাখেন স্টিভেন পল জবস।জবস তার আসল মায়ের সাথে অনেক বছর পর দেখা
করেছিলেন।ততদিনে তিনি বিশাল তারকা।এঘটনায় যদিও তার কোন দোষ নেই এটা নিঃসন্দেহে তার
জীবনের একটি অন্ধকার দিক।
২। মাদকাসক্তি এবং বিশৃঙ্খল জীবন
তাকে ২-৩ বার স্কুল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয় বিশৃঙ্খলার জন্য।টিনেজ বয়সে
চুল অনেক লম্বা রাখতেন।গোসল করতেন না;এই অভ্যাস অবশ্য পরিণত বয়সেও ধরে
রেখেছিলেন।কলেজে পড়ার সময় মারিজুয়ানা ও এলএসডি সেবন করতেন।
![]() |
তরুণ স্টিভ জবস |
৩। ড্রপ আউট
তিনি রিড কলেজ থেকে মাত্র এক সেমিস্টার পরই ড্রপ আউট হন।
৪। বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
স্টিভ ওজনিয়াক শুধু জবসের সাথে এপলের সহপ্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না।তিনি জবসের
একজন বহুদিনের পুরোনো বন্ধুও ছিলেন।এপল শুরু করার আগে জবস আতারি নামে
একটি ভিডিও গেম নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
![]() |
দুই স্টিভ |
১৯৭৫ এর গ্রীষ্মে তাকে ব্রেকআউট নামে একটি গেম ডিজাইন করার দায়িত্ব দেয়া হয়।ওজনিয়াক
তখন হাওলেট-পেকার্ট নামে একটি
কোম্পানির ক্যালকুলেটর ব্যাবসায় কাজ করতেন।ডিজাইন নির্মাণে স্টিভ জবস একটু অপটু
ছিলেন।তাই তিনি ওজনিয়াককে ধরলেন।জবসের এই কাজের জন্য ৭০০ ডলার পাওয়ার কথা ছিল।তিনি
বললেন কাজটি করতে সাহায্য করলে ওজনিয়াককে ৫০% দিবেন।তারপর তারা একসাথে ডিজাইন
করেন।ডিজাইনটি দেখে আতারি এতই খুশি হয় যে স্টিভ জবসকে বোনাস হিসেবে ৫০০০
ডলার দেয়।কিন্তু জবস ওজনিয়াককে শুধু ৩৫০ ডলার দেন যেটা ছিল ৭০০ ডলারের অর্ধেক।
ওজনিয়াক বোনাসের ব্যাপারটা জানতেন না।১০ বছর পর আতারি কোম্পানির ইতিহাস
নিয়ে লেখা একটি বইয়ে এই বোনাসের কথাটি উঠে আসে।ওজনিয়াক এটা শুনে খুবই মর্মাহত
হন।তার কাছে মনে হয়েছিল তিনি তার বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছে প্রতারিত হয়েছেন।
৫। সহকর্মীদের সাথে বাজে ব্যাবহার
তিনি তরুণ প্রোগ্রামারদের কাজকে কোন গুরুত্বই দিতে চাইতেন না। তিনি নিয়মিত
সাক্ষাৎ মিস করতেন।একইসাথে অন্যদের কাজের প্রাপ্য মর্যাদা দিতেন না।তাকে যদি নতুন
কোন আইডিয়া শোনানো হত সেগুলোকে তিনি গোনায়ই ধরতেন না।কিন্তু আইডিয়াগুলো যদি ভালো
হতো তাহলে সেগুলো নিয়ে অন্যদের সাথে এমনভাবে আলোচনা করতেন যেন আইডিয়াগুলো তার
নিজের!
৬। ব্যাক্তিগত জীবনে দায়িত্বে অবহেলা
পেশাগত দিক দিয়ে যতটা এগিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাক্তিজীবনে সেটা নিয়ে যেতে
পারেননি।এপল প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৭৭ সালে তার প্রথম গার্লফ্রেন্ড ক্রিসান
ব্রেনান গর্ভবতী হন।ব্রেনান নিশ্চিত ছিলেন জবসই হচ্ছেন তার সন্তানের পিতা।কিন্তু
জবস সেটা অস্বীকার করেন।তিনি ব্রেনানকে তখন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতেন।১৯৭৮ সালে যখন
কন্যা শিশুটি জন্ম নেয় তখন জবস আর ব্রেনান মিলে মেয়ের নাম রাখেন লিসা নিকোল
ব্রেনান। কিন্তু জবস তারপর আর বাচ্চার কোন খোঁজ নেন নি।
![]() |
ক্রিস ব্রেনান এবং তার কোলে লিসা |
তিনি মাঝেমাঝে আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন কিন্তু বারবার অস্বীকার করেন যে
তিনি লিসার পিতা।শেষ পর্যন্ত ১৯৭৯ সালে ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয় তিনিই পিতা।
৭। পদত্যাগ
সহকর্মীদের সাথে ক্রমাগত মতের মিল না হতে থাকায় ১৯৮৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর
স্টিভ জবস এপল থেকে পদত্যাগ করেন।পরে ১৯৯৬ সালে আবার ফিরে আসেন।মাঝের এগার বছরে নেক্সট
নামে একটি কম্পিউটার কোম্পানি এবং পিক্সার নামে একটি এনিমেশন কোম্পানি
খুলেন।নেক্সট সফল না হলেও পিক্সার এখন জনপ্রিয় এনিমেশন ছবি নির্মাণের জন্য বিখ্যাত।
৮। দাতব্যের কাজ এড়িয়ে চলা
তিনি বিলিয়নিয়ার হলেও চ্যারিটিতে
খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না।২০১০ সালে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ধনী পরিবারদেরকে চ্যারিটির
একটি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন।অনেক বিলিয়নিয়ার এবং মিলিয়নিয়াররা এতে সাড়া দিলেও তাদের
মধ্যে স্টিভ জবস ছিলেন না।
৯। ক্যান্সার
২০০৩ সালে তার অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে।পরে সেটি লিভারেও ছড়িয়ে
পড়ে।শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে তাকে ক্যান্সারের কাছে হার মানতে হয়।
১০। বিতর্ক
স্টিভ জবসের কিছু কাজ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তিনি জেরক্স নামে
আরেকটি কোম্পানি থেকে আইডিয়া চুরি করেছেন এমন অভিযোগ করেন অনেকে। বিখ্যাত ব্যান্ড দ্য
বিটলস এর এপল করপস এর সাথে জবসের এপল এর বিভিন্ন সময় মামলা
হয়।এছাড়া ২০০১ সালের একটি শেয়ার মার্কেট এর স্ক্যান্ডালের জন্য স্টিভ জবসকে প্রকাশ্যে
ক্ষমা চাইতে হয়।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে তিনি এত বড় জায়গায় গেলেও সাধারণ মানুষদের মতো তার
মধ্যেও কিছু ত্রুটি ছিল।ভুলত্রুটি নিয়েই মানুষের জীবন।তবে এসবের চেয়ে প্রযুক্তির
পেছনে তার অবদানের কথাই সবাই স্মরণ করবে বেশি।তিনি একজন কিংবদন্তি হিসেবেই বেঁচে
থাকবেন আমাদের মাঝে।
এই লেখার ইংরেজি ভার্সন পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
No comments