কোকাকোলা আবিষ্কারের পেছনের গল্প


১৮৬৫ সালের এপ্রিলের কোন এক সন্ধ্যা।আমেরিকা জুড়ে তখন ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে।জর্জিয়ার কলম্বাসে যুদ্ধের ময়দানে গুরুতর আহত হলেন এক কর্ণেল।এই ঘটনাই জন্ম দিল এক বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান কোমল পানীয় কোম্পানি কোকাকোলার।


কোকাকোলার লোগো 



কোকাকোলা বর্তমানে প্রায় ২০০টি দেশে বিক্রি হচ্ছে।এর অধীনে পানীয় আছে প্রায় ৩৫০০টি। বলা যায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কোমল পানীয়র বাজারে একচেটিয়া রাজত্ব করে চলেছে।কোকাকোলা শব্দটি এসেছে কোকা পাতা (কোকা অর্থকরী ফসল হিসেবে বিভিন্ন দেশে চাষ হয়) এবং কোলা নাটস (কোকেন এর উৎস) থেকে।কোকাকোলার আবিষ্কার বা আজকের এই অবস্থান এর সাথে গৃহযুদ্ধের  সম্পর্ক কি?কোকেনই বা কেন আসলো এখানে?





কোকাকোলার আছে প্রায় ৩৫০০টি পানীয় 




যে কর্ণেল আহত হয়েছিলেন তার নাম জন পেম্বারটন।তিনি একজন ফার্মাসিস্টও ছিলেন।মারাত্বকভাবে জখম হওয়ার পর ডাক্তার তাকে উচ্চ ডোজের মরফিন দিলেন যেন মারা যাওয়ার আগের সময়টা একটু শান্তিতে থাকতে পারেন।কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেলেন।তখন গৃহযুদ্ধের আহত সবাইই চিকিৎসার জন্য নেওয়া ব্যাথানাশক মরফিনে আসক্ত হয়ে পড়েন।অন্যদের মতো পেম্বারটনও আসক্ত হয়ে পড়লেন।আটলান্টায় একটা ফার্মেসি দেন মরফিন বিক্রির জন্য।নেশা যখন দেখলেন আর ছাড়তে পারছেন না তখন প্রায় একদশক ধরে তিনি মরফিনের বিকল্প কিছু আবিষ্কার এর চেষ্টা করেন।



জন পেম্বারটন (১৮৩১-১৮৮৮)




তিনি যখন বিকল্প কিছু খুঁজছিলেন তখন ফ্রান্সের কোকা ওয়াইন এর সাথে পরিচিত হন।এটা ছিল কোকেন আর ওয়াইন এর মিশ্রণ।তিনি এটা দেখে কোকেন আর এলকোহল এর মিশ্রণে তৈরি করেন ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা নার্ভ টোনিক কোকা কোলা।তিনি সম্ভবত স্পেনিশ পানীয় কোলা কোকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৫৩ সালে এটার স্বত্ব কোকাকোলা কিনে নেয়। কোকাকোলা  তখন ফার্মেসিতে সিরাপের শিশিতে বিক্রি হতো।বলা হতো এটা মরফিন আসক্তি কমায়,মাথা ব্যাথা আর পেট ব্যাথাও কমায়।


এদিকে ১৮৮৬ সালে এলকোহল নিষিদ্ধ করা হয় কিন্তু কোকেন বৈধ থাকে।পেম্বারটন তখন এলকোহল ছাড়া নতুনরূপে পানীয় আনলেন।এসময় তিনি আরেক ফার্মাসিস্ট আশা ক্যান্ডলার এর সাথে ব্যাবসায়িক পার্টনারশিপ করেন।ক্যান্ডলার ২৩০০ ডলার দিয়ে পেম্বারটনের কাছ থেকে ফর্মূলা কিনেন।পেম্বারটন তারপরও মরফিন এর আসক্তি কমাতে পারছিলেন না।শেষ পর্যন্ত ১৮৮৮ সালে তিনি মারা যান।তারপর কোকাকোলার দায়িত্ব নেন ক্যান্ডলার।তিনি পেম্বারটন এর ফর্মূলা একটু পরিবর্তন করেছিলেন।আর ফর্মূলাটি খুবই গোপনে রাখা হতো।বর্তমান ফর্মূলাটি সানট্রাস্ট ব্যাংকের একটি ভল্টে রাখা আছে গোপনীয়তা রক্ষা করে।



আশা ক্যান্ডলার (১৮৫১-১৯২৯)





এদিকে ১৯০৩ সাল থেকে কোকেন এর ব্যবহার কমতে থাকে।১৯২৯ সালে কোকাকোলাতে কোকেন পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়।১৮৯৮ সালে ওষুধের উপর ট্যাক্স বসায় কোকাকোলা ফার্মেসি থেকে বিদায় নেয় এবং শুধুই পানীয় হিসেবে একে উপস্থাপন করা হয়।তখন সোডা ফাউন্টেইন হিসেবে কোকাকোলা বিক্রি হতো।সীমিত পরিসরে বোতলে বিক্রি হতো৷



কোকাকোলার বোতলের বিবর্তন



১৯১৯ সালে আর্নেস্ট উডরাফ ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কোকাকোলা কিনে নেন।তিনি কোকাকোলার মান উন্নয়ন এবং বোতলজাত করায় বেশি জোড় দেন।তিনি পানীয়কে ঠান্ডা বোতলে বাজারজাত করায় এটি দারুণ ব্যাবসা সফল হয়। ৪ বছর পর তার ছেলে রবার্ট উইনশিপ উডরাফ কোকাকোলার চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।তিনি কোকাকোলাকে বৈশ্বিক পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।


আর্নেস্ট উডরাফ (১৮৬৩-১৯৪৪)


রবার্ট উইনিশিপ উডরাফ (১৮৮৯-১৯৮৫)




১৯২৮ সালের অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো কোকাকোলা স্পন্সর হয়।এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈনিকদের বিশেষ ছাড়ে কোকাকোলা কেনার সুযোগ করে দেয়া হয়।এতে বিভিন্ন দেশে আমেরিকান সৈনিকদের কাছে পৌছানোর পাশাপাশি সেসব দেশে কোকাকোলার পরিচিতিও পায়।এছাড়া সান্তা ক্লজকে দিয়ে কোকাকোলার বিজ্ঞাপন করানোয় এটি পায় আলাদা জনপ্রিয়তা।১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো মহাকাশে পাঠানো হয় কোকাকোলার পানীয়।



তবে কোকাকোলা যে সবসময় শুধু সাফল্যই পেয়ে আসছে এমন নয়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা জার্মানিতে কোকাকোলা ঢুকা নিষিদ্ধ করে দেয়।তখন জার্মানিতে অবস্থিত কোকাকোলার ফ্যাক্টরি তৈরি করে আরেক পানীয় ফান্টা।যুদ্ধের পর কোকাকোলা এটাকে নিজেদের করে নেয় এবং এখনো ফান্টা বাজারে চালু আছে।বিশ্বুজুড়ে কোকাকোলার একচেটিয়া আধিপত্য থাকলেও স্কটল্যান্ডে স্থানীয় পানীয় আয়রন ব্রু আর কোকাকোলার বিক্রি প্রায় সমান।এছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় চীন ও ভারতে তুলনামূলক কম বিক্রি হয় কোকাকোলার  পণ্য।কিউবা ও উত্তর কোরিয়ায় কোকাকোলা নিষিদ্ধ। যদিও অবৈধভাবে ঠিকই বিক্রি হয় সেখানে।



কোকাকোলার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি থাকলেও সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আরেক আমেরিকান পানীয় পেপসি।মজার ব্যাপার হচ্ছে পেপসি ১৯২৮১৯৩৩ সালে এই দুইবার কোকাকোলাকে তাদের কোম্পানি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু কোকাকোলা তা নাকচ করে দেয়।


কোকাকোলার প্রতিদ্বন্দ্বী পেপসি 




কোকাকোলা ১৯৭৮ সাল থেকে ফূটবল বিশ্বকাপ সহ ফিফার অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলো স্পন্সর করে আসছে।১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও স্পনসরশিপ করেছে।বর্তমানে এপল গুগলের পর তৃতীয় প্রভাবশালী কোম্পানি কোকাকোলা।নিঃসন্দেহে আরো কয়েক প্রজন্ম কোকাকোলার পানীয়র স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। 




1 comment:

  1. আমরা আমাদের দোকানে কোকাকোলার মাল পাচ্ছি না 01886454245

    ReplyDelete

Powered by Blogger.