ইলন মাস্কঃ বাস্তবের আয়রন ম্যান (পার্ট ৩)
ইলন মাস্কের কিছু ট্রিভিয়া
# মাস্ক হয়ত ১৮ বছর আগেই মারা যেতে পারতেন! প্রচন্ড কর্মব্যাস্ত মানুষ মাস্ক ২০০০ সালের ডিসেম্বরে ওই সময়ের নতুন স্ত্রী জাস্টিনকে নিয়ে ২ সপ্তাহের ছুটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায়।এটা ছিল সে বছর তার প্রথম ছুটি।জানুয়ারিতে যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় আসেন তখন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন।কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়ে ভুল করে বসেন।পরে একদিন হাসপাতালে অন্য এক চিকিৎসক রোগটি ধরতে পারেন।সাথেসাথে ম্যালেরিয়ার ঔষধ ডক্সিসাইক্লিন দেন।তিনি বলেন আর একদিন দেরি করলে হয়ত ওষুধটি আর কাজ করতো না।ম্যালেরিয়ায় তার ওজন অনেক কমে গিয়েছিল।তিনি এ ঘটনা নিয়ে বলেন
ছুটি সম্পর্কে আমি তখন একটি মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছি।সেটা হচ্ছে ছুটি আপনাকে মেরে ফেলবে।
# ২ টি বিশাল কোম্পানির সিইও তিনি।তার প্রতিটি দিনই মহা ব্যস্ততায় কাটবে এটাই স্বাভাবিক।সপ্তাহের ৭ দিনই কাজের মধ্যে থাকেন তিনি।শুরুর দিনগুলোয় জিপ২ এর অফিসে কাজ করতে করতে অফিসের কাউচেই ঘুমিয়ে পড়তেন।কাজ করেনও খুব দ্রুত গতিতে।তার কোন কাজ করতে যদি বলেন ১ ঘন্টা লাগবে সহকর্মীরা ধরে নেন এটা তাদের করতে ১-২ দিন লাগবে।যদি মাস্কের লাগে ১ দিন তাদের সেটা করতে লাগে ১-২ সপ্তাহ।প্রডাক্টিভিটি ধরে রাখার জন্য কর্মীদের দেয়া তার একটি ইমেইল ভাইরাল হয়েছিল এবং প্রশংসিত হয়েছিল।
# কাজের ব্যাপারে তিনি খুবই সিরিয়াস।কর্মীদের কাছ থেকে 'না' কথাটি কখনোই শুনতে চাননা।তিনি চান কর্মীদের মাঝেও যেন এধরণের মনোভাব থাকে।কারো কাজে সন্তুষ্ট না হলে বরখাস্ত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না।টেসলাতে এমন অনেককেই বরখাস্ত করেছেন যারা তার সাথে শুরু থেকেই ছিলেন।তার মতে
আপনি কাউকে ফায়ার করতে চাইলে যত দেরি করবেন ততো আপনার কাছে মনে হবে ওকে আরো আগেই ফায়ার করা উচিত ছিল।
তিনি নিজের ব্যাস্ততা নিয়ে আক্ষেপ করেন না।তার কাছে যতক্ষণ বেঁচে আছেন নিজের সেরাটা দিয়ে যাবেন পৃথিবীকে।যদিও সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সপ্তাহে ১২০ ঘন্টা কাজের কথা বলে আবেগী হয়ে পড়েন।
# আয়রন ম্যান এর টনি স্টার্ক চরিত্রটি ইলন মাস্ক থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো।এজন্যই অনেকে তাকে বাস্তবের আয়রন ম্যান বলেন।আয়রন ম্যান ২ সিনেমাতে ক্যামিওতেও ছিলেন তিনি।এই সিনেমার কিছু অংশের শ্যুটিং হয় স্পেসএক্সে।এছাড়া বিগ ব্যাং থিওরি সিটকমেও তিনি ক্যামিওতে ছিলেন।হলিউডের সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন কয়েকটি।থ্যাংক ইউ ফর স্মোকিং তার মধ্যে অন্যতম।
![]() |
আয়রন ম্যান ২ তে ইলন |
![]() |
বিগ ব্যাং থিওরিতে ইলন |
# ১৯৯৯ সালে জিপ২ বিক্রি করে যখন প্রথম মিলিয়নিয়ার হলেন তখন ম্যাকলেরেন এফ ওয়ান কিনেন ১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে৷এছাড়া রজার মুর অভিনীত জেমস বন্ড এর দ্য স্পাই হু লাভড মি সিনেমাতে ব্যবহৃত সাবমেরিন কারটি কিনেন ১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে।তিনি চেয়েছিলেন সেটাকে সত্যিকারের সাবমেরিন কারে রূপান্তরিত করতে।সেটা না পারলেও ভবিষ্যতে আনবেন বলেছেন।তবে সেটা সংখ্যায় ৪-৫টির বেশি হবেনা।কারণ সাবমেরিন কারের বাজার অনেক কম।
![]() |
জেমস বন্ডের সাবমেরিন কার |
# টেসলাতে তার অফিস রুম একেবারে মাঝামাঝি স্থানে চারিদিক স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা।তিনি এটা করেছেন যেন কর্মীরা দেখতে পান সিইও হয়েও তাকে কতটা পরিশ্রমের মধ্যে থাকতে হয়।কর্মীদের মধ্যেও যেন সেই উদ্যোম থাকে সেজন্যই এই ব্যাবস্থা।
# টেসলার ফ্যাক্টরিতে গাড়ি তৈরির অনেক কাজই রোবটের মাধ্যমে করা হয়।এদের নাম এক্স ম্যান ও মার্ভেল এর অনেক চরিত্রের নামে দেয়া।
# কর্মী নেওয়ার সময় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করা দক্ষ,পরিশ্রমী তরুণ কর্মীদের বেছে নেন।তার চাকরির ইন্টারভিউগুলো খুবই ইন্টারেস্টিং হয়।
# স্পেসএক্স আমেরিকার সর্বপ্রথম বেসরকারি রকেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
# গতবছর টেসলা মোটর থেকে মোটর অংশটি বাদ দিয়ে কোম্পানির নাম শুধু টেসলা রাখা হয়।এজন্য টেসলা ডট কম ডোমেইনটি কিনতে হয়।
# স্পেসএক্স আমেরিকার সর্বপ্রথম বেসরকারি রকেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
# গতবছর টেসলা মোটর থেকে মোটর অংশটি বাদ দিয়ে কোম্পানির নাম শুধু টেসলা রাখা হয়।এজন্য টেসলা ডট কম ডোমেইনটি কিনতে হয়।
#তিনি কোম্পানি চালাতে যত দক্ষ প্রেজেন্টেশনে ততটাই আনাড়ি।তিনি প্রেজেন্টেশন দেওয়ার আগে প্র্যাক্টিসও করেন না।
# তাকে অনেকেই বিল গেটস ও স্টিভ জবসের মিশ্র ভার্সন মনে করেন।
# তার ৫ টি ছেলে সন্তান আছে।প্রথম ২ জন টুইন এবং পরের তিনজন ট্রিপলেট।৫ জনের মা ই জাস্টিন মাস্ক।
![]() |
সন্তানদের সাথে ইলন মাস্ক |
# বর্তমানে প্রেম করছেন কানাডিয়ান গায়িকা গ্রিমস এর সাথে।
![]() |
প্রেমিকা গ্রিমসের সাথে ইলন মাস্ক |
# তার বোন টোসকা মাস্ক একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক।
![]() |
মায়ের ৭০তম জন্মদিনে ভাইবোনদের সাথে ইলন মাস্ক |
![]() |
ছোটভাই কিম্বাল মাস্কের বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাইবোন ও মায়ের সাথে ইলন মাস্ক |
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অন্যান্য
২০১৬ সালে তিনি দ্য বোরিং কোম্পানি নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।এটি শহরের নিচে টানেল তৈরির কাজ করছে যেটা ট্রাফিক জ্যাম দূর করতে সহায়তা করবে।গাড়ি চলতে পারবে ঘন্টায় ২০০ কিমি গতিতে।এছাড়া ওপেন এ আই এবং নিউরালিংক নামের আরো দুইটি প্রতিষ্ঠানও আছে তার।
![]() |
দ্য বোরিং কোম্পানির লোগো |
![]() |
এ পর্যন্ত তার কোম্পানিগুলো |
নেভাডা মরুভূমিতে প্যানাসোনিক এর সাথে গিগাফ্যাক্টরি নামে বিশাল ব্যাটারি তৈরির কারখানা নির্মাণ করছেন।আমেরিকায় এরকম ৪ টি গিগাফ্যাক্টরি বানাবেন ঘোষণা দিয়েছেন।
![]() |
গিগাফ্যাক্টরি |
আগামী ছয়-সাত বছরের মধ্যে তিনি মংগলে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।তিনি চান সেখানে বসবাসের জন্য শহর গড়ে তুলতে।অনেকেই মনে করেন মংগলে প্রথম মানুষের পা রাখতে চান তিনিই।তিনি নিজে অবশ্য তা মনে করেন না।তিনি বলেন
আমি মংগলে পা রাখতে যাবো তখনই যখন দেখবো আমি মারা গেলেও স্পেসএক্স ভালোভাবেই চলবে।
তবে তিনি এও চান তার মৃত্যুটা যেন মংগল গ্রহে হয়!
স্পেসএক্স বর্তমানে বিগ ফ্যালকন রকেট নামে একটি রকেট বানাচ্ছে যেটা হবে এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় রকেট।এছাড়া মাস্ক বলেছেন তিনি কিছু স্যাটেলাইট নিয়ে যেতে চান মহাকাশে যা দিয়ে বিশ্ববাসী বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারবে।এছাড়া তা দিয়ে মংগল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ করাও সহজ হবে।
![]() |
সর্বডানে বিগ ফ্যালকন রকেট |
মাস্ক বর্তমানে ২০.১ বিলিয়ন ডলারের মালিক।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো যদি সফল হয় ৫০ এর মাঝামাঝি বয়সে গিয়ে হয়ত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন।তবে তাকে অর্থ দিয়ে মাপা যাবেনা।নিঃসন্দেহে সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে এই মানুষটি।তিনি একজন সুপারস্টার।আশা করি তিনি আমাদের মংগল গাথা শোনাতে সক্ষম হবেন।শোনাতেই হবে কারণ তিনি যে ইলন মাস্ক! অসম্ভবকে সম্ভব করা যেন তার কাজ!
No comments